জিম্বাবুয়ের একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ইন্টার্ন টিনাশে মাপুরাঙ্গা। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। নিশ্চিত ছিল ভবিষ্যৎও। কলেজ ডিগ্রি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ব্যাংকটির স্টাফ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এর পরই আঘাত হানে কভিড-১৯ মহামারী। লকডাউনের মধ্যে ২৪ বছর বয়সী মাপুরাঙ্গা প্রথম ছাঁটাই হওয়াদের মধ্যে একজন ছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি কখন তার ডিগ্রি পাবেন তাও নিশ্চিত নয়। মাপুরাঙ্গার মতো আফ্রিকার লাখ লাখ তরুণ এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। এটি তাদের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তেও প্ররোচিত করছে।
হারারের দক্ষিণ-পূর্বের একটি বিস্তৃত শ্রমিক শ্রেণীয় এলাকা চিটুংউইজারে মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন মাপুরাঙ্গা। তিনি বলেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে মহামারীটি সত্যিই আমাকে অনেক প্রভাবিত করেছে। আমার কাছে মোবাইল ইন্টারনেট কেনার কোনো অর্থ নেই এবং অন্যদের মতো অনলাইনে পড়াশোনা করার জন্য আমার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ নেই।
মাপুরাঙ্গা বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে আমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত সিলেবাসের অনেক কিছুই বাকি পড়ে আছে। আমি নিশ্চিত নই যে, কখন ডিগ্রি শেষ করব। এখন না আমি স্নাতক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারছি, না চাকরি খুঁজে পাচ্ছি।
মাপুরাঙ্গা তার বেশির ভাগ সময় বাড়িতে কাটায় এবং একটি ছোট সবজি বাগান দেখাশোনা করে। এটিই তাদের পরিবারের খাবারের প্রধান উৎস। তার মা দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে রাস্তায় খোদাই করা পাথর ও ঝাড়ুর মতো জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করেন। লকডাউনে সে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে।
মাপুরাঙ্গার অবস্থা ভয়াবহ মনে হতে পারে। তবে তিনি নিজের পরিবর্তে তার কিছু বেকার সহকর্মীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, তারা অ্যালকোহল, মাদক ও পতিতাবৃত্তির মতো কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। অনেক যুবক আশা হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
আফ্রিকাজুড়ে মাপুরাঙ্গার মতো তরুণরা কভিডজনিত অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন এবং অনেকেরই ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। দরিদ্রপীড়িত আফ্রিকার ১৫টি দেশের ১৮-২৪ বছর বয়সীদের ওপর চালানো জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আফ্রিকা ইয়ুথ সার্ভের প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে, মহামারীটি আফ্রিকাজুড়ে এরই মধ্যে বেকারত্ব হার উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। জরিপে ৪ হাজার ৫০০ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মহামারীর কারণে বেকার এবং ৩৭ শতাংশ তাদের শিক্ষা বন্ধ কিংবা বিরতি দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন। বাকী ৮ শতাংশের বেতন বন্ধ এবং ১৮ শতাংশকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। এছাড়া ১০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা করতে হবে। জোহানেসবার্গভিত্তিক ইচিকোউইজ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন এ জরিপ পরিচালনা করেছে।
আফ্রিকার ৫৪টি দেশের ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে আনুমানিক ২৫ কোটি ১৮-২৪ বছর বয়সী। গবেষণাটি অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, গ্যাবন, ঘানা, কেনিয়া, মালয়, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, উগান্ডা ও জাম্বিয়ার প্রধান শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোতে চালানো হয়েছিল।
এর আগে ২০২০ সালের জরিপে অংশ নেয়া ৪০ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যৎ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছিল। মহামারী সেই আত্মবিশ্বাসকে ৩১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার বাইরে একটি জিমের ২৫ বছর বয়সী দারোয়ান রোনাল্ড ম্যাথে। তার মাসিক বেতন এখন ৪৩ ডলারের সমান। মহামারীর পর তার বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি বাসা ভাড়া দেয়ার পর কিছুই থাকে না। অর্ধেক বেতন দিয়ে কিছুই করতে পারি না।
এজন্য তিনি এখন কঙ্গো সীমান্তের কাছাকাছি কৃষকদের কাছ থেকে গ্রেনেডিলাস ফল কিনে রাজধানীতে বিক্রি করেন। প্রতি বস্তা ফল থেকে তার সামান্য মুনাফা থাকে। তিনি বলেন, আমার ব্যবসা এখনো ছোট। তবে আমার একটি স্বপ্ন আছে। আমি এমন কাউকে খুঁজছি যে ব্যবসা বড় করার জন্য আমাকে ঋণ দেবে। আমি সরকারের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছি না।