করোনায় যশোরের ৩৩৭ স্কুল বন্ধের উপক্রম

যশোর: যশোরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন, প্রি-ক্যাডেট ও প্রিপারেটরিসহ বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বড় দুর্দিন চলছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে জেলার স্বল্প বাজেট ও বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংসার চালাতেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে স্কুলগুলো। এমন হুমকির মুখে পড়েছে যশোরের ৩৩৭টি বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। উদ্বিগ্ন ৭০ হাজারেরও বেশি অভিভাবক।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ৩৩৭টি কিন্ডারগাটের্ন, প্রি-ক্যাডেট ও প্রিপারেটরি রয়েছে। এরমধ্যে অভয়নগরে ২৩টি, কেশবপুরে ১৮টি, চৌগাছায় ২৫টি, ঝিকরগাছায় ৪৮টি, বাঘারপাড়ায় ৩৩টি, মণিরামপুরে ৪২টি, শার্শায় ৫৩টি ও সদর উপজেলায় ৯৫টি রয়েছে। এসবের বাইরে আরও কিছু থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে গড়ে ২শ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে বলে একাধিক পরিচালক জানিয়েছেন।

সেই হিসাবে ৩৩৭টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ৬৭ হাজার ৪শ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর বাইরে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চার শতাধিক করে শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে ৭০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে এখনও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকায় বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন আদায় করতে পারছে না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত দিতে পারছে না বেশিরভাগ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। কেবল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনই বন্ধ হয়নি। ঘরভাড়াও বাকি পড়েছে অনেকের। আবার কেউ কেউ ঋণ করে ঘরভাড়া পরিশোধ করেছে। আবার কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে বিক্রি করতে হয়েছে বিদ্যালয়। ছাড়তেও হয়েছে বিদ্যালয়ের ভবন। এ অবস্থার মধ্যে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের কমবেশি বেতন অব্যাহত রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মচারী ও পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কমবেশি বেতন এখনও পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নবকিশলয় ও যশোর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্ধেক বেতন দেওয়ায় ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে ১২জন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন। নবকিশলয় স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন বাড়ার দাবি অব্যাহত রেখেছেন। বেতন কমানোর কারণে ক্ষুব্ধ তারা। অর্ধেক বেতন দেওয়ার কারণে যশোর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগ করা শিক্ষকদের বক্তব্য, দুই পরিচালক লাখ লাখ টাকা আয় করলেও তাদের পুরোপুরি বেতন দিচ্ছেন না।

তাদের আরও অভিযোগ, বেসরকারি এই স্কুলটি পরিচালকরা ইচ্ছেমতো পরিচালনা করেন।

শিক্ষকদের এ অভিযোগের বিষয়ে ল্যাবরেটরি স্কুলের দু’পরিচালক সামছুজ্জামান ও গাজী মুকিতুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হলেও ওইমাস পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পুরোপুরি বেতন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বেতনে প্রতিষ্ঠানটি চলে। এপ্রিল মাস থেকে বেতন আদায় বন্ধ হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করা হয়নি। বরং ঋণ করে তাদেরকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হচ্ছে। স্কুল স্বাভাবিক হলে বাকিটা সমন্বয় করার চিন্তা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই গত ২৪ জুন হঠাৎ ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। তারা পদত্যাগপত্রে কেবলমাত্র পরিচালকদের ‘অমানবিক’ আচরণের কথা লিখেছেন। যা গ্রহণযোগ্য না। ’

করোনা দুর্যোগের কবলে পড়ে শহরের পালবাড়ি ও পুলিশ লাইন এলাকার দুইটি কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের লিটল অ্যাঞ্জেল কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান তাদের আসবাবপত্র এক জায়গায় করে অল্প ভাড়ার দুই-একটি কক্ষে রেখেছে। তারা এখনো পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করছে। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলেও কিন্ডারগার্টেনগুলো টিকতে পারবে বলেও জানান ইকবাল হোসেন।

বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন দেখভালের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, এটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাজ।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কেবলমাত্র বই দেওয়ার বিষয়টি দেখাশোনা করি। এর বাইরে আমরা তেমন কিছু করতে পারি না। কারণ কোনো ধরনের নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যে বিনা টিসিতে যে কোনো সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *