কভিডে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে নারী কৃষক

নারীরা রয়েছেন জলবায়ু সংকটের সামনের সারিতে। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারীতে তারা ক্ষুধার্ত থাকছেন, শিশুরা যাতে নিয়মিত খেতে পারে, সেজন্য তারা নিজেরা কম খাচ্ছেন। পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মাত্রাও বেড়ে চলেছে।

একশনএইডের এ গবেষণায় কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কীভাবে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের ১৪টি দেশের ক্ষুদ্র নারী কৃষকের জীবনকে প্রভাবিত করেছে তা উঠে এসেছে। বাজার বন্ধ, যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্যের দাম বাড়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং তা পরবর্তী ফসল মৌসুমের চাষাবাদকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

একশনএইডের জলবায়ু সহনশীল স্থায়িত্বশীল জীবন-জীবিকা বিভাগের প্রধান ক্যাথরিন গুতুন্ডু বলেন, বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ নারী কৃষকদের ঋণী ও অভাবগ্রস্ত করে দিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন পরের মৌসুমে চাষাবাদ করার সামর্থ্য হারিয়েছেন। সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে এসব পারিবারিক কৃষকের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হতে পারে।

গত মাসে ১৯০ জন নারী কৃষক ও স্থানীয় নেতাদের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার:

কভিড-১৯-এর কারণে বাজার বন্ধ থাকার পাশাপাশি লকডাউনের জন্য মানুষের উপার্জন ও খাদ্য সুরক্ষায় মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে। ৮৩ শতাংশ নারী কৃষক মহামারী চলাকালীন তাদের জীবিকা ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তারা খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছেন।

নারীরা তাদের শিশুর চাহিদাকে নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাদের অনেকেই কোনো কোনো বেলার খাবার না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকছেন, যাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের খাবারে কম না পড়ে। ৫৮ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, লকডাউনের সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা অনেক দিনই খাবার খেতে পারেননি।

গাম্বিয়ার ক্ষুদ্র কৃষক ইয়ানদেহ গিসি বলেন, আমরা নারী ও মেয়েরা প্রতিনিয়ত পুরুষদের সহিংসতার শিকার হচ্ছি। বিশেষ করে আগে যারা উপার্জন করত, এখন তারা বেকার। তাদের স্বামীরা সবসময়ই হিংস্র আচরণ করছে।

মালাবির ক্ষুদ্র কৃষক এলোন্যাফ এনখামা ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘ইডাইয়ে’র কারণে কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জীবিকা হারিয়ে নিজের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহে সংগ্রাম করছেন। এ বছর খরার কারণে তার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বর্তমানে মহামারীর কারণে পুনরায় তার ফসল উৎপাদন ও বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জীবিকার তাগিদে এখন তিনি প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা হেঁটে মিকাওয়া নামের এক বুনো ও বিষাক্ত কন্দ সংগ্রহ করেন, যা খাওয়ার উপযুক্ত করতে ৬ ঘণ্টা সেদ্ধ করতে হয়। ক্ষুধার কারণে এলাকায় বুনো কন্দগুলোর চাহিদা বেড়েছে।

বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার ক্ষুদ্র নারী কৃষক লাইলা বেগম বলেন, আমার স্বামী ও আমি আমাদের সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য নিজেরা কম খাচ্ছি। ক্ষুধা শিশুদের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। খালি পেটে তারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। যে কারণে আমি ও আমার স্বামী দুই বেলা খাবার খাচ্ছি। এমনকি কখনো কখনো একবেলা খেয়েও দিন অতিবাহিত করছি।

গবেষণাটি বাংলাদেশ, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, কেনিয়া, মালাবি, নেপাল, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, তানজানিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়েতে পরিচালিত হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *